[উক্ত লেখাটি জেএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে Srijonshil.com এর পক্ষ থেকে গত ১৬ ই অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাকের একটি বিশেষ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।]

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে আংশিক নম্বর প্রদানের ব্যবস্থা আছে,
তাই সবগুলো প্রশ্নের উত্তরে প্রাসঙ্গিক কিছু না কিছু লিখে আসার চেষ্টা করবে

প্রিয় পরিক্ষার্থী Srijonshil.com এর পক্ষ থেকে তোমার প্রতি শুভেচ্ছা রইল। পরীক্ষা প্রায় দোরগোড়ায় এসে গেছে। এখন নতুন করে কিছু পড়ার সুযোগ কম। তাই যা পড়েছ, সেগুলোর মধ্যে কোনো কিছু না বুঝে পড়ে থাকলে, সেটি একটু বুঝে পড়ে ঐ বিষয়ে তোমার ধারণা ক্লিয়ার করো। সেইসাথে বইয়ের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর সাথে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয়ের সম্পর্ক করার চেষ্টা করো। তাহলেই তুমি সৃজনশীল প্রতিটি প্রশ্ন ভালো করে উত্তর করতে পারবে। প্রিয় পরীক্ষার্থী, তুমি জানো, ভালো ফলের জন্য শুধু ভালো প্রস্তুতি থাকলেই চলবে না, ভালো প্রস্তুতির প্রমাণ রাখতে হবে। তুমি কী ধরনের ছাত্র/ছাত্রী তা পরীক্ষক দেখবেন না। তিনি দেখবেন তুমি পরীক্ষার খাতায় কেমন উপস্থাপন করেছ। তাই আজ আমি পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখার ব্যাপারে কিছু কথা বলবো।

অনেকসময় পরীক্ষার প্রশ্ন একটু কঠিন হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা ঘাবড়ে যায় এবং প্রথম দিকে হাল ছেড়ে দিয়ে অনেকটুকু সময় নষ্ট করে ফেলে। এইক্ষেত্রে মনে রাখবে, তোমার যেরকম পরীক্ষা হবে তোমার অন্যান্য লাখো বন্ধুদেরও প্রায় তেমনটিই হবে। তাই পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে কোনো কারণেই ভয় পাবে না। প্রথমে যে প্রশ্নটির উত্তর সবচেয়ে ভালো পারবে সেটি খুব তাড়াতাড়ি লিখে ফেলবে। এরপর আস্তে আস্তে দেখবে তুমি সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই কমবেশি পারছো।

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে উত্তর হতে হবে প্রাসঙ্গিক। কোনো একটি প্রশ্নের উত্তরে অযথা বাড়তি কিছু লিখলে অতিরিক্ত কোনো নম্বর পাবে না। শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে। তাই অপ্রাসঙ্গিক কোনো কিছুই লিখবেনা।

সৃজনশীল প্রশ্নের ‘গ’ ও ‘ঘ’-এর উত্তর দেয়ার সময় অনেক পরীক্ষার্থী উদ্দীপকের কথা উল্লেখই করেনা। এটি একটি মস্ত বড় ভুল। তাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই উদ্দীপকের প্রেক্ষাপটে উত্তর দিবে। এই প্রশ্ন দুটির পাশাপাশি সৃজনশীল প্রশ্নের অন্যান্য প্রশ্নগুলো কিভাবে উত্তর করবে তা নিচে আলোচনা করা হলঃ

নম্বর প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রেঃ
এই প্রশ্নটির নম্বর ১। এর উত্তরটি একটি শব্দে, একাধিক শব্দে বা সর্বোচ্চ একটি বাক্যে দেওয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রেই তুমি ১ নম্বর পাবে। অযথা উত্তরের আকার বড় করলে তুমি এই ১ নম্বরের বেশি পাবে না। আবার এক শব্দে সঠিক উত্তর লিখলেও স্যার/ম্যাডাম তোমাকে ১ নম্বরের কম দিতে পারবে না। তবে উত্তরটি একটি পূর্ণ বাক্যে হলেই ভালো হয়। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর তোমাকে স্মৃতি থেকে দিতে হবে। তাই কী, কে, কখন, কোথায়, কাকে বলে এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তরগুলো ভালো করে মুখস্থ করে নাও।

নম্বর প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রেঃ
‘খ’ নম্বর প্রশ্নের মোট নম্বর ২। এই প্রশ্নে সাধারণত কী বোঝায়, ব্যাখ্যা করো, বর্ণনা করো, কেন এ ঘটনা ঘটেছে ইত্যাদি জানতে চাইবে। এই প্রশ্নটির উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে একটু বুঝতে চেষ্টা করবে তুমি কোন প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছ। প্রথমেই প্রসঙ্গটি একটু সঙ্গায়িত করে নেবে। উত্তরের এই অংশটি হলো জ্ঞান অংশ, যার জন্য তুমি পাবে ১ নম্বর। তারপর প্রসঙ্গটি কয়েকটি বাক্যে নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করো বা বুঝিয়ে লেখো। উত্তরের এই অংশটি হলো অনুধাবন অংশ, যার জন্য তুমি পাবে আরও ১ নম্বর। তুমি যদি শুধু জ্ঞান অংশটি  লিখ তবে ১ নম্বর পাবে। আর অনুধাবন অংশ সহ পুরো উত্তরটি লিখতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে পুরো ২ নম্বর। এইক্ষেত্রে উত্তরটি দুই প্যারায় দিতে পারলে ভালো।

নম্বর প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রেঃ
‘গ’ নম্বর প্রশ্নের মোট নম্বর ৩। এই প্রশ্নে উদ্দীপকের প্রদত্ত ক্ষেত্রে কোনো একটি প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করতে বলে বা বর্ণনা করতে বলে কিংবা কোনো সূত্র, নিয়ম, তত্ত্ব, নীতি, পদ্ধতি ইত্যাদি প্রয়োগ করে কিছু নির্ণয় করতে বলে।এই প্রশ্নটির উত্তর করার আগে ভালো করে উদ্দীপক ও প্রশ্নটি পড়ে কোন প্রসঙ্গটি নিয়ে তোমাকে উত্তর করতে হবে সেটি বুঝার চেষ্টা করতে হবে। এইক্ষেত্রে যে প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করতে বলে বা যে প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করতে বলে বা যেটি নির্ণয় করতে বলে, সেটি প্রথমে সঙ্গায়িত করে নিতে হবে বা আনুষঙ্গিক কোনো সূত্র বা তত্ত্ব থাকলে তা লিখতে হবে। উত্তরের এই অংশটি হলো জ্ঞান অংশ। এর জন্য তুমি পাবে ১ নম্বর। উক্ত প্রসঙ্গটি নিজের ভাষায় বুঝিয়ে লিখতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। উত্তরের এই অংশটি হলো অনুধাবন অংশ। আর উদ্দীপকের প্রদত্ত ক্ষেত্রে উক্ত প্রসঙ্গটি বা সূত্রটি প্রয়োগ করতে পারলে অর্থাৎ, উদ্দীপকের প্রদত্ত ক্ষেত্রে উক্ত প্রসঙ্গটি কীরূপ হবে তা লিখতে পারলে বা সূত্র প্রয়োগ করে কিছু নির্ণয় করতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। উত্তরের এই অংশটি হলো প্রয়োগ অংশ। তুমি যদি এক্ষেত্রে শুধু জ্ঞান অংশটি লিখতে পারো, তবে পেয়ে যাবে ১ নম্বর। আবার তুমি যদি জ্ঞানের সাথে অনুধাবন অংশটি লিখতে পারো তবে পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। আর যদি তুমি প্রয়োগ অংশ সহ পুরো উত্তরটি সঠিকভাবে লিখতে পারো তবে পেয়ে যাবে পুরো ৩ নম্বর। এইক্ষেত্রে উত্তরটি দুই থেকে তিন প্যারায় লিখতে পারলে ভালো।

নম্বর প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রেঃ
‘ঘ’ নম্বর প্রশ্নের মোট নম্বর ৪ । এইক্ষেত্রে উদ্দীপকের প্রদত্ত ক্ষেত্রে কোনো একটি প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করে এর থেকে সিদ্ধান্ত নিতে বা ধারণা সৃষ্টি করতে বলে, কিংবা উদ্দীপকের প্রদত্ত ক্ষেত্রে কোনো একটি প্রসঙ্গ সম্পর্কে একটি উক্তি বা বিবৃতি মূল্যায়ন করতে বলে  কিংবা কোনো একটি ঘটনা বিশ্লেষণ করতে বলে। ‘গ’ নম্বর প্রশ্নের মতোই এই প্রশ্নটির উত্তর করার আগে ভালো করে উদ্দীপক ও প্রশ্নটি পড়ে কোন প্রসঙ্গটি নিয়ে তোমাকে উত্তর করতে হবে সেটি বুঝার চেষ্টা করতে হবে । উত্তরের শুরুতে উক্ত প্রসঙ্গটি প্রথমে সঙ্গায়িত করে নিতে হবে। উত্তরের এই অংশটি হলো জ্ঞান অংশ। এর জন্য তুমি পাবে ১ নম্বর। প্রসঙ্গটি নিজের ভাষায় বুঝিয়ে লিখতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। উত্তরের এই অংশটি হলো অনুধাবন অংশ। আর উদ্দীপকে প্রদত্ত ক্ষেত্রে এই প্রসঙ্গটি প্রয়োগ করতে পারলে অর্থাৎ, উদ্দীপকে প্রদত্ত ক্ষেত্রে উক্ত প্রসঙ্গটি কীরূপ হবে তা লিখতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। উত্তরের এই অংশটি হলো প্রয়োগ অংশ। আর তুমি যদি উদ্দীপকের প্রদত্ত ক্ষেত্রে প্রসঙ্গটি প্রয়োগ করার পর এর থেকে নতুন করে কোনো একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারো, কিংবা কোনো একটি উক্তি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পার কিংবা কোনো একটি ঘটনার পিছনের কারণগুলো কী ব্যাখ্যা করতে পারো (প্রশ্নে যেটি চাওয়া হয়েছে সেই অনুসারে), তবে তুমি পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। উত্তরের এই অংশটি হলো উচ্চতর দক্ষতা অংশ। এক্ষেত্রে শুধু জ্ঞান অংশটি লিখতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে ১ নম্বর। জ্ঞানের সাথে অনুধাবন অংশটি লিখতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। আর যদি তুমি প্রয়োগ অংশটিও লিখতে পারো তবে পেয়ে যাবে আরও ১ নম্বর। আর উচ্চতর দক্ষতার অংশটি সহ পুরো উত্তরটি সঠিকভাবে লিখতে পারলে তুমি পেয়ে যাবে পুরো ৪ নম্বর। এইক্ষেত্রে উত্তরটি তিন থেকে চার প্যারায় লিখতে পারলে ভালো। তোমার জানা থাকা ভালো, উত্তরের জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার অংশগুলো অনেক সময়ই আলাদা করে পর পর লেখা সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্রে প্রশ্নটির উত্তর সাজিয়ে লেখার প্রয়োজনে এই অংশগুলো আগে পরে কিংবা একসাথে লেখা যেতে পারে।

তাহলে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো, ‘গ’ বা ‘ঘ’ প্রশ্নের উত্তরে শুধু জ্ঞান বা অনুধাবন অংশটি লিখেও তোমার ১ বা ২ নম্বর পাওয়ার সুযোগটি থাকছে। (একইভাবে ‘খ’ প্রশ্নের উত্তরে শুধু জ্ঞান অংশটি লিখেও তুমি ১ নম্বর পেতে পারো।) তাই যদি কোনো একটি সৃজনশীল প্রশ্নের ‘গ’ ও ‘ঘ’ নম্বর প্রশ্নের উত্তর কী হবে তা তুমি পুরোপুরি বুঝতে না পারো, সেক্ষেত্রে অন্তত প্রাসঙ্গিক জ্ঞান ও অনুধাবন অংশগুলো  লিখে এসো। উত্তর সঠিক হলে এইক্ষেত্রে তুমি ১ ও ২ নম্বর পেয়ে যাবে। তাই হাতে সময় থাকলে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্নের উত্তর না করে এসোনা। সবগুলি প্রশ্নের উত্তরে প্রাসঙ্গিক কিছু না কিছু লেখার চেষ্টা করবে। আরেকটি ব্যাপার, তুমি এই আংশিক নম্বর পাওয়ার প্রচেষ্টা তখনই শুধুমাত্র করবে, যখন তোমার অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর লেখা ও দেখা শেষ কিন্তু হাতে কিছুটা সময় থাকবে।